দৃশ্য-১
“ইউ মিন নবমী’জ অঞ্জলি ইজ ওভার? ওহ নো! হানি শী ইজ সেইং …….”
হানিঃ “ওহ রিয়েলি? ক্যান ইউ প্লিজ অ্যারেঞ্জ অ্যানাদার অঞ্জলি আফটার দশমী”?
আমিঃ “ ওয়েল। ইট উড বি লিটল ডিফিকাল্ট ফর মি গিভেন দশমী মিনস পুজো ইজ ওভার”।
পাশ থেকে বন্ধুর কোমরে মৃদু খোঁচা সহ গুনগুনানি “কাম ডাউন। “কাম ডাউন”।
দৃশ্য-২
“এই যে এদিকে।
আরেকটু এদিকে, পুরুতমশাই।
আমি পাইনি।
আমিও”।
ক্লান্ত, হয়রান পুরুতমশাই আমার হাতে শান্তির জলের ডাব্বাটা ধরিয়ে দিয়ে বলেন “যা তো মা, একটু সবার মাথায় ছিটিয়ে দিয়ে আয়”।
আঁতকে উঠে বলি “পাগল হয়েছেন না কি? আমি আর আপনি এক? শান্তির লেভেল কমে যাবে না?”
আর আমার নিচু গলা ছাপিয়ে ভেসে আসে মিমির আর্তরব “ একেবারে নয় পুরুতমশাই। এটা কিছুতেই করাবেন না ওকে দিয়ে। শত্রুর কি অভাব আছে ওর? সেটা আর বাড়িয়ে কাজ নেই”।
ওয়াশিংটন থেকে আসা পুরুতমশাই মন্ট্রিয়লের রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামাবেন না। এমনটাই স্বাভাবিক। তাই ঝামরে উঠে বলেন “ মেয়ে বলে ডেকেছি না তোকে? সবাইকে বলি না বুঝলি। সারা পৃথিবীতে মাকে দেখে বেড়াই, ডেকে বেড়াই, তুই ই দুর্গা, আমি বলেছি তাই। এবার ওঠ তো দেখি। সবাই অপেক্ষা করছে”।
পরে সব শুনে নীলেশের সংযোজন “ যা বুঝলাম ঠাকুরমশাই ইজ পারশিয়ালি কারেক্ট। ইন্দ্রাণীর মধ্যে ফিফটি পারসেন্ট দুর্গার সঙ্গে যে ফিফটি পারসেন্ট ইন্দিরা গান্ধী মিশে আছেন সেটা উনি এই আড়াইদিনে ফুললি আইডেন্টিফাই করে উঠতে পারেননি”।
কিন্তু সত্যিই বুঝতে পারছি না নীলেশের ওপর ঠিক কতটা রাগ করবো।
ছোট্ট ব্রেক থেকে ফিরে, চন্দনের পাত্রে হাত ছোঁয়াতে ছোঁয়াতে নিজের কানে শোনা বাণী “ বাবারে। ওই তো এসে গেছে আবার। চুপ। চুপ। মেয়ে তো নয়….”!
পরম দুঃখের বিষয় বাকিটা আর কখনোই আমার সামনে শেষ করবার সৎসাহস দেখান না ওঁরা কেউ।
দৃশ্য-৩
জনৈকাঃ “তোদের পুরুতমশাই বুঝলি, আমায় বলেন কিনা….”
আমিঃ ( এত মধুর হাসি আমার আছে তিরিশ সেকন্ড আগেও বিন্দুমাত্র অবহিত ছিলাম না) “তোদের পুরুত বলছ কেন? বলো আমাদের পুরুত। এটা তোমার পুজো নয়? তোমরা আছো বলেই না আমরা আছি”?
জনৈকাঃ “ তাই তো। তাই তো। ওমা দইয়ের বাটিটা যে কোথায় রাখলাম। কিচ্ছু মনে থাকে না রে মা আজকাল। দাঁড়া খুঁজে নিয়ে আসি”।
মিমিঃ “ইউ আর আ জিনিয়াস”।
দৃশ্য-৪
আমিঃ (পঞ্চপ্রদীপ জ্বালাতে জ্বালাতে) “ একটা কথা জিজ্ঞেস করবো, জেঠু”?
পুরুতমশাইঃ “একশোবার করবি”।
আমিঃ “ আমি যদি এই পিলসুজ থেকে পঞ্চপ্রদীপ কি ধূপ জ্বালিয়ে নিই তুমি খুব রাগ করবে, তাই না? নিয়ম নেই, তাই না”?
পুরুতমশাইঃ “কিসের নিয়ম নেই? যতো সব বাজে কথা!সেটাই তো করতে হতো। তুই যে কেন সেই তখন থেকে এত এত দেশলাই নষ্ট করছিস ভগবান জানেন”।
আমিঃ (আড়চোখে টার্গেট তখনো সেখানেই অধিষ্ঠাত্রী দেখে নিয়ে), “কি হয়েছিলো জানো তো, ২০১২ সালে আমি বেমক্কা বকুনি খেয়েছিলাম প্রদীপ থেকে ধূপ জ্বালিয়েছিলাম বলে”।
পুরুতমশাইঃ (উদাত্ত কণ্ঠে), “যে বকেছিল সে কিস্যু জানে না”।
টার্গেটঃ(মিনমিনেতম গলায়,অমন গলা যে ওঁর আছে, তিরিশ সেকন্ড আগেও বিন্দুমাত্র অবহিত ছিলাম না ), “আপনি একেবারে ঠিক কথা বলছেন”, করিস না মা এত দেশলাই নষ্ট। বেদান্ত সোসাইটিও তো বলেছেন । এসবের কোনও অর্থই নেই”।
বন্ধুঃ “২০১২ র শোধ ২০১৬ তে নিলে? সেটাও এইভাবে? কিচ্ছু ভোলো না,না”?
আমিঃ “সবই মায়ের ইচ্ছে”।
দৃশ্য-৫
পুরুতমশাইঃ “যাবার আগে তোর সঙ্গে একটা ছবি তুলতে দিবি? “জানি না কেন, তোকে আমার বড় ভালো লেগেছে রে। খুব কাজের মেয়ে তুই”।
আমিঃ (আড়চোখে টার্গেট তখনো সেখানেই অধিষ্ঠাত্রী দেখে নিয়ে), “নিশ্চয়ই। আমি কিন্তু জানি তোমার আমাকে এত ভালো লেগেছে কেন”।
পুরুতমশাইঃ “বাহ। জানিস? বোঝা তো দেখি আমায়”।
আমিঃ “আমাকে প্র্যাক্টিকালি এত লোকের খারাপ লাগে, তাঁরা আমাকে এত অকাজের মনে করেন, একটা ব্যালান্স তো থাকবে কোথাও বলো”?
টার্গেট (চূড়ান্ত অপ্রস্তুত মুখে), “এই মেয়েটা না? কি একটা মনে এলো, আর বলা নেই কওয়া নেই..কি কাজ করিস বলতো তুই পুজোতে..আমরা সবাই সেটাই বলাবলি করি”।
বন্ধুঃ “হে ঈশ্বর”!
মিমিঃ (গালে চুমু দিয়ে), “ইউ আর আ জিনিয়াস”।
আমার শান্ত বাবার শিক্ষা ছিল , কেউ এক গালে চড় মারলে আরেক গাল বাড়িয়ে দেওয়ার।
বাবার অশান্ত মেয়ে সেটাকে সামান্য ইম্প্রভাইজ করতে বাধ্য হয়েছে জীবনরক্ষার তাগিদে।
আমার দর্শন খুব সিম্পল।
আই নেভার স্টার্ট দ্য গেম।
মাই রুল ইজ আমার সঙ্গে খেললে আমিও খেলবো। আর সব খেলাতেই হার-জিত আছে। কিন্তু হেরে যেতে আমার ভীষণ খারাপ লাগে যে।
কারণ আমি আমার মায়েরও মেয়ে।
পুজো আসে। পুজো যায়।
খাসা। বড়ই আমোদ পেলুম। তবে পুরোটা পড়ে মনে হল নীলেশ বাবুর ঐ ৫০% ইন্দিরা গান্ধী কথাটা বোধহয় ভুল নয়।
বহুদিন বাদে mail alert আসাতে আশ্বস্ত-ও হওয়া গেল। ভেবেছিলুম আপনি বোধহয় লেখাই ছেড়ে দিলেন। ভালো থাকবেন। শুভ বিজয়া।
LikeLiked by 1 person
শুভ বিজয়া। পেনসিলের জন্য এরকম অপেক্ষা থাকতে পারে সেটা চোখে দেখেও কম লেখবার অব্যশটা শোধরাতে পারি না কিছুতেই। ভালো থাকবেন।
LikeLike