এতো বড় রঙ্গ

(২)

টেবলের অবস্থা দেখলে অতি নিঠুরেরও চোখ দিয়ে জল বেরোবে। গণ্ডা গণ্ডা ডিম সেদ্ধ, রাশি রাশি পুর আর ব্রেড ক্রাম্পের গুঁড়োয় একেবারে হতশ্রী দশা। এর মধ্যই দক্ষ হাতে  কোনও দিকে ভ্রূক্ষেপ না করে ডিমের গোল্লা পাকাচ্ছেন “-” দেবী আর পাশেই চরিত্রের সঙ্গে একেবারেই খাপ খায় না এরকম ভেবলু মুখে বসে আছেন চৌধুরী বাবু। আমাদের দেখেই অকূলে কূল পেলেন তিনি।

“শোনো না। সামথিং ইজ রং। এই গোল্লাটা আমার হাতে ঠিক আসছে না। একটু হেল্প করবে প্লিজ? বলেই তড়াং উঠে পড়েন তিনি, আমার হাতে একটা ব্যর্থ ব্যথিত গোল্লা  ধরিয়ে দিয়ে।

আর “যাহ! তুইও ওদের দলে ভিড়ে গেলি! আমি এখন কি করি!” বলে আবার সোফায় লম্বা হন “-”!

সব শেষ করে ওঠা হল যখন তখন কোমরের আর কিছু অবশিষ্ট নেই।  ঝনঝনে মাথা আর টনটনে শিরদাঁড়া নিয়ে কোনোরকমে বিছানায়। ছিটেফোঁটাও ঘুম এল না, সকালে কি করে কি ম্যানেজ করা হবে এই আতংকে। চোখ বন্ধ করলেই কানের কাছে “ডিম আর ফিশের” ঐকতান।

প্রভাতের সাথে সাথেই “-” দেবীর শুভ রিটার্ন এবং এগ ডেভিলের দ্বিতীয় অধ্যায়ের সূত্রপাত।

“ইন্দ্রাণীদি খোকাবাবু যায়টা লুপে ফেলে দাও তো। চপ ভাজতে ভাজতেই শুনতে থাকুক ময়ূখদা। ওতে কি হয় জানো? অজান্তেই মনের গভীরে স্টেপগুলো একেবারে গেঁথে যাবে”। ফলশ্রুতি- কড়াইতে ছ্যাঁক ছোঁকের  তালে তাল মেলায় “দাদু গেল চমকে, পাড়া গেল থমকে”।

বিয়েটাও নিজে করেছি আর বাবা-মাও ওপরে। কপাল চাপড়ে শোক প্রকাশের কোনও জায়গাই নেই।

এসব তো কিছুই নয়। আমার যেটা সবচাইতে প্রাণে লেগেছে সেটা হল এই দুই পার্টনারের ভয়ংকর ভয়াবহ হৃদয়হীন ব্যবহার। বাড়ি জুড়ে অমন মনকাড়া সুগন্ধ আর আধখানাও টেস্ট করতে দেবে না!

“এখান থেকে একটাও নয়। সব হিসেবের। আরে প্রফিট থেকেই তো ল্য তাজে যাবো আমরা। সেখানে খেয়ো না বাবা যত ইচ্ছে”।

হ্যাঁ। সেটাই ডীল পার্টনারদের। প্রফিট দিয়ে ল্য তাজের ডিনার -মন্ট্রিয়লের অন্যতম সেরা ভারতীয় রেস্তোরাঁ।

রাগে দুঃখে গলা ভেঙ্গে যায় আমার।

“ইডিয়টগুলো। ল্য তাজ কখনও নিরঞ্জনের রেসিপির সাথে কমপিট করতে পারে?”

এইসব করতে করতেই বাহন সমেত চলে আসেন মিতা মাসি-মেসোমশাই। আর বাক্স প্যাঁটরা সমেত আমাদের দেখে আঁতকে ওঠেন দুজনেই।

“একিরে। করেছিস কি তোরা? রাত্তির জেগে এই এত এত  বানিয়েছিস বুঝি?”

নালিশ শুরু করতে না করতেই ময়ুখদের পক্ষ নিয়ে নেন সদাহাস্যময় মেসোমশাই আর ট্রে- পোস্টার-প্লেট- জামাকাপড় সমেত আমরা পৌঁছে যাই অকুস্থলে- কলেজ নোতরে দ্যম।

আর তার ঠিক উল্টো দিকেই রোদ্দুরে ঝকঝক করে ওঠে সেন্ট জোসেফস ওরেটরির চুড়োটা- এক স্কুপ ফ্রেশ ভ্যানিলা আইসক্রিমের মতো।

রাগ আপনিই মিলিয়ে যায় এ পরবাসে। আধো ফোটা বাতাসে।

সবকিছু সামলে সুমলে ভেতরে ঢুকতে না ঢুকতেই প্রবল খুশি হয়ে এগিয়ে আসে মার্থা।

“ওমা তুই সালোয়ার পরেছিস? কি সুন্দর দেখাচ্ছে”!

আমিও সবে গদগদ হয়ে বলতে যাচ্ছি “ হ্যাঁ রে। আমার তো এই দুটো বই তিনটে নেই। আর শাড়ি সন্ধ্যাবেলার আগে পরবে কে? তাই ভাবলাম–”

কথাটা শেষ করবার আগেই মিটিমিটি হেসে ওঠেন “-”দি; “দেখ মার্থা, ও যে আজ হট প্যান্টস চড়িয়ে চলে আসেনি সেটাই কি যথেষ্ট নয়? সেইটাই ওর জাতীয় পোশাক কিনা।”

পেট গুলোন হাসির মাঝেই সামনে সূর্যদা।

“হাসবে পরে। চলো ডিরেকশনের পোষ্টারগুলো সেঁটে আসি”। সেক্রেটারি বলে কথা।  আদেশ পালন করা ছাড়া পথ নেই।

আর সেই মোমেন্টেই শুরু হল দ্বিতীয় সমস্যার।

চিরকালই আমি ‘প্রপার ইনভেস্টমেন্টে বিশ্বাসী। তাই যে দেশে আট মাস উইন্টার সেদেশে হাই বুটসের কালেকশনটাই আমার মতো বুদ্ধিমানেরা করে থাকেন। আর সামারের জন্য ম্যাচিং ম্যাচিং রকমারি চটিগুলো? কিনি –দুমাস চুটিয়ে পরি। তারপর চিরবিদায়। সেরকমই একটি বস্তু পায়ে থাকবার জন্য এই মুহূর্তে আমার এই অশেষ নাকানি চোবানি ।

মা নাক কুঁচকে বলতেন “সস্তার তিন অবস্থা।  যতদিন ছিলেন জিগ্যেস করিনি কখনো কিন্তু এখন নিশ্চিত জানি অবস্থাগুলো বিশেষ সুবিধের নয়।  হতেই পারে না। সে কি চটিরে ভাই।  হাঁটতেই পারি না।  এক পা হাঁটি তো দুবার  খুলে যায়।  কেডস অভ্যস্থ পা বিরক্তিতে আঙ্গুল নাড়ায়।  কতক্ষণ সহ্য হয় আর? তাই খালি পায়েই বিশ্ব জয়।  আই মিন বঙ্গ জয়।

আর এই সম্পূর্ণ প্রসেসটায় কাজের মধ্য কাজ এটাই হল যে  যিনি দেখেন তিনিই বলেন “ইস।  রোগা মেয়েটা আর কত পারে! পায়ে একটা চটি অব্দি গলাবার সময় নেই!”

নীচে ক্যাফেটেরিয়ায় আনন্দমেলার ফুড স্টল। ওপরে স্টেজ রিহার্সাল।

মাঝখানে আমি এক যাযাবর।

2 Comments

Add yours →

  1. 2nd lekhatao darun upobhog korlam

    Like

Leave a reply to rina Cancel reply